প্রকাশিত: Fri, Mar 24, 2023 10:35 PM আপডেট: Wed, Jun 25, 2025 5:14 PM
গণহত্যা, বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী এবং স্বীকৃত ঘটনার বিশ^স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়াস
অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন : একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের নবীন শিক্ষক, মহসিন হল-এর সহকারী আবাসিক শিক্ষক। মহসিন হল-এ আমার ছোট একটি বাসা ছিলো। মহসিন হলে রাত সাড়ে দশটার একটু পরে খেতে বসেছি যখন তখন প্রথমে গোলাগুলির শব্দ পেলাম। গোলাগুলির শব্দটি ক্রমেই বাড়তে থাকলো। খাওয়াটা কোনো রকমে শেষ করেছি। সারারাত গোলাগুলি, ঘুম হলো না। বিছানায় না শুয়ে মেঝেতে বিছানা করে শুতে হলো গোলাগুলির ভয়ে।
রাত আড়াইটার দিকে মহসিন হল-এর পাশ দিয়ে মাইকে কিছু প্রচার হলো, যা বুঝেছিলামÑ সারাদিন ‘সান্ধ্য আইন’ জারি থাকবে, ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো। পরদিনও সারাদিন গোলাগুলি চললো। কোথায় হচ্ছে এই গোলাগুলি তখন বুঝিনি। পরে জেনেছি যে, ইপিআরের সদর দপ্তর পিলখানা ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনে গোলাগুলি হয়েছে। দুপুরের দিকে নয়া বাজারের দিক থেকে আগুন ও ধোঁয়ার কুন্ডলী উড়তে দেখলাম। পরে শুনেছি, নয়া বাজারের কাঠের আড়ৎ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো।
এর মধ্যে দুপুর বেলায় আমার বাসার জানালা দিয়ে রেললাইনের দিকে তাকিয়েছিলাম, আজকের কাঁটাবনের রাস্তাটি ছিলো রেললাইন, দুই দ্বারে বস্তি। আমি দেখলাম, একজন তরুণ, যার বয়স ২৪ বা ২৫ বছর হবে। তাকে সেনাবাহিনীর লোক ধাক্কা দিতে দিতে রেললাইনে ফেলে দিলো। ছেলেটি হাত জোর করে কিছু বলছিলো, ঠিক ওই মুহূতেই বেয়নট চার্জ করা হলো তার বুকের উপরে। দৃশ্যটি ছিলো খুবই হৃদয়বিদারক। এমন দৃশ্য আমি জীবনেও দেখিনি। মাথাটা ঘুরে যাচ্ছিলো, বসে পড়ি। এভাবে ২৬ তারিখ কাটলো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। ২৭ তারিখ সকালে দুই ঘণ্টা সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার করা হয়েছিলো।
আমি পথে বের হয়েছিলাম কিছু বাজার করে আনবো। কিন্তু যখন মহসিন হল-এর মাঠের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন দেখলাম, কিছু মানুষ জটলা করে আছে। গিয়ে দেখি প্রায় ৬টি মৃতদেহ পড়ে আছে। রাতে গরিব মানুষেরা... বারান্দায় ঘুমাত, তাদের উপর গুলি করা হয়েছে। ওখানে শুনলাম ইকবাল হল-এর... এখানে ওখানে ছড়িয়ে আছে ছাত্রদের লাশ। শুনলাম, ড. মনিরুজ্জামানকে হত্যা করা হয়েছে। আর জগন্নাথ হল-এ অসংখ্য ছাত্রকে হত্যা করে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে। কারও হাত, কারও পা বের হয়ে আছে। এসব শোনা ও দেখার পর আর আমার বাজার করা হয়নি। আমি আমার মহসিন হল-এ ফিরে আসি।
আমরা জাতীয়ভাবে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালন করি। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে তা এখনো স্বীকৃত হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন লেখাজোকায় আমাদের গণহত্যা সম্পর্কে প্রচুর তথ্য আছে। ২৫ মার্চের গণহত্যা স্বীকৃত সত্য আমাদের। ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিলো। এই সংখ্যা হিসাব করে বলা হয় না ঠিকই, তবে এটা আইকনিক ফিগার। যেমন ৬০ লাখ ইহদি হত্যা করা হয়েছিলো হিটলারের সেনাবাহিনী দ্বারা। সেটাও একটা আইকনিক ফিগার। আইকনিক ফিগার নিয়ে কখনো কোনো প্রশ্ন করতে নেই। তা গ্রহণযোগ্য মানের বলেই বিবেচনা করতে হবে।
একাত্তরের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে জেনারেলদের একটা বৈঠকে বলেছিলেন, ৩০ লাখ বাঙালি হত্যা করো, আর বাকি যারা থাকবে তারা আমাদের হাত-পা চেটেপুটে খাবে। সেই ৩০ লাখ মানুষই হত্যা করেছিলো পাকিস্তানিরা। টিক্কা খানকে বাংলাদেশে আনা হয়েছিলো, যিনি বেলুচিস্তানের কসাই নামে খ্যাত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশেরও কসাই ছিলেন। টিক্কা খান মেট্রিক পাসও ছিলেন না, কিন্তু সেনাবাহিনীতে তার বর্বরতাকেই যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করে তাকে ক্রমাগতভাবে উঁচু আসনে আসীন করা হয়েছিলো।
২৫ মার্চের গণহত্যা বিশ^স্বীকৃত সত্য। তবে এই গণহত্যাকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি না দেওয়াটা বিপন্ন বিস্ময় মনে হয়। আমাদের উচিত হবে, কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো। এ ব্যাপারে আমাদের সরকার কতোটুকু কী করছেন তা নিয়ে আমার সংশয় আছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পার করে আমরা বায়ান্ন বছরে পা দিচ্ছি। এতোদিনে কেন আমরা এই স্বীকৃত ঘটনার স্বীকৃতি আদায় করতে পারলাম কেন? এটা বড় প্রশ্ন। সরকারের কাছে আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ থাকবে, ২৫ মার্চ গণহত্যার দিনটিকে যেন আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃত হয়, তার জন্য সচেষ্ট হওয়া। পরিচিতি : ইতিহাসবিদ
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
